১৪ কোম্পানির শেয়ার ধারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হুলস্থূল

Date: 2022-10-02 23:00:14
১৪ কোম্পানির শেয়ার ধারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হুলস্থূল
জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১১৬ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বেড়েছে। এর মধ্যে ১৪ কোম্পানির শেয়ার কেনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। ফলে আগস্ট মাসের তুলোনায় কোম্পানিগুলোর শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের উল্লম্ফন ঘটেছে। কোম্পানিগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকালীদের শেয়ার ধারণ বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপর থেকে ১০ শতাংশ।সাম্প্রতিক সময়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এমন আগ্রাসী বিনিয়োগ আগে দেখা যায়নি। আগস্ট মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এই ১৪ কোম্পানির শেয়ার কিনেছে ২৬০ কোটি টাকারও বেশি।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিভিন্ন চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ফলশ্রুতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছে। কোম্পানিগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এমন বড় বিনিয়োগ বাজারের জন্য শুভ ইঙ্গিত বলে তারা মনে করছেন।প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার এমন হুলুস্থুল আগ্রহ থাকা এই ১৪ কোম্পানির মধ্যে অ্যাডভেন্ট ফার্মা, আলিফ ম্যানুফেকচারিং, অ্যাপেক্স ফুড, বিবিএস, কপারটেক, ঢাকা ডাইং, হাক্কানী পাল্প, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, ম্যকসন্স স্পিনিং, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, কুইনসাউথ টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড।এই ১৪টি কোম্পানির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি শেয়ার বেড়েছে বিমা খাতের কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সে। ৩১ জুলাই কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। যা ৩১ আগস্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশে।এক মাসে শেয়ার বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা ৪১ লাখ ৯২ লাখ শেয়ার। যার বাজারমূল্য ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার দাম আগস্ট মাস থেকে এখন পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস ৪৪ টাকা ৮০ পয়সায় অপরিবর্তিত রয়েছে। শেয়ারবাজারে আসার পর কোম্পানিটি এ বছর প্রথম বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীরা খুব একটা খুশি হতে পারেনি। প্রথম বছর কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দিয়েছে ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, যা বিমা খাতে সর্বনিম্ন ডিভিডেন্ড।চলতি ২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ’২২) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২৬ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১০ পয়সা।এরপর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিলো ফার্মা খাতের কোম্পানি ইন্দো-বাংলা ফার্মার শেয়ারে। ৩১ জুলাই কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। যা ৩১ আগস্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বা ১ কোটি ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫৬টি শেয়ার। যার আগস্ট মাসে বাজারমূল্য ছিল ২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ১৭ টাকার ওপরে। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ২১ টাকার ওপরে।আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ’২১-মার্চ ’২২) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৬৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৯ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৪ শতাংশ নগদ ও ৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রাসী শেয়ার কেনার তৃতীয় কোম্পানি হলো এডভেন্ট ফার্মা। ৩১ জুলাই কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২২ দশমিক ১০ শতাংশ। যা ৩১ আগস্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশে। মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারণ বেড়েছে ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ বা ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৯৯টি শেয়ার। আগস্ট মাসে যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ২৩ টাকার কাছাকাছি। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ২৮ টাকার উপরে।৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৯৭ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল এক টাকা। আগের বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ ও ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।আগস্ট মাসে অ্যাপেক্স ফুড ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের চতুর্থ সর্ববৃহৎ বিনিয়োগের কোম্পানি। ৩১ জুলাই কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। যা ৩১ আগস্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশে। মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারণ বেড়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৩টি শেয়ার। আগস্ট মাসে যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১৭০ টাকার ওপরে। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ২২২ টাকার ওপরে।আর্থিক প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ২৩ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।অন্যান্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ:প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আগস্ট মাসে আলিফ ম্যানুফেকচারিংয়ের ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার বা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনেছে, বিবিএসের ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ১ কোটি ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৭৭০টি শেয়ার, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ৫০ লাখ ১৪ হাজার ৮০০টি শেয়ার, ঢাকা ডাইংয়ের ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ৫৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩টি শেয়ার, হাক্কানী পাল্পের ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৪০০টি শেয়ার, ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ১ কোটি ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৪৯২টি শেয়ার, কুইনসাউথ টেক্সটাইলের ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ১ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪৫টি শেয়ার, সাফকো স্পিনিংয়ের ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২টি শেয়ার, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ১ কোটি ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৭টি শেয়ার, এবং ইয়াকিন পলিমারের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ বা ৬৯ লাখ ১২ হাজার ৯৪৯টি শেয়ার কিনেছে।

Share this news